রুপে নয় , ভালবাসা থাকে মনে

আমি মাসুদ এবার এইচ.এস.সি পাস করে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হলাম। কোন দিন প্রেম ভালোবাসা করি নাই। কিন্তু আমার মনের একটা ইচ্ছা অনার্স এ বইসা একটা প্রেম করব তাও ক্লাসের সব চেয়ে কালো এবং খারাপ চেহারার একটা মেয়ে দেইখা।
আপনারা ভাবতেছেন সবাই যেখানে সুন্দর সুন্দর মেয়ে খুজে সেখানে আমি কেনো এরকম কালো মেয়ে খুজি??
একটু পরে বলি এসব কেমন?
প্রথম দিন ক্লাস এ গিয়ে ক্লাসের সব চেয়ে বিশ্রী মেয়ে খুজতে লাগলাম।অবশেষে একটা মেয়ে দেখলাম যার চেহারার রং কলমের কালির মতই কালো,নাক টা বোচা,গালে বিভিন্ন প্রকারের দাগ।
মনে মনে ভাবলাম আমার সপ্নের রাণী পেয়ে গেছি।
ক্লাসে অনেক সুন্দরি মেয়ে আসছে সব ছেলেরা দেখি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য একপ্রকারে ভিড় জমে গেছে। কিন্তু ঐ কালো মেয়ে টার সাথে কেউ মিশে না, মেয়েটি ক্লাসের এক কর্নারে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে আছে।

আমি মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলাম,,,,
আমি: হাই। আমি মাসুদ।
মেয়েটি: আমি রিয়া।
আমি: আমি কী তোমার ফ্রেন্ড হতে পারি?
রিয়া: অবস্যই।
(আমি ওর চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছাপ দেখতে পেলাম যেনো ও নিজেকে বিশ্বাস ই করতে পারতেছে না যে আমি ওর ফ্রেন্ড হতে চাইছি কারন কেউ অর সাথে ভালো করে কথা ই বলে না)
আমি:চল ওই দিকটায় বসি।(মাঠের মধ্যে?
রিয়া:চল।
আমি: তুমি আগে কোন কলেজে ছিলা?
রিয়া:-হলি ক্রস কলেজে
আমি : ও ভাল।
এভাবেই আমাদের দুজনের বন্ধুত্ব হল,,,,
কলেজে আসলে প্রথম আমি রিয়াকে খুজি এবং রিয়া আমাকে খুজে,,,,
এরকম দেখতে দেখতে ১ বছর পার হয়ে গেল আমি এখন রিয়াকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ও থাকতে পারি না আর রিয়া ও থাকতে পারে না।
তাই ১৪ফেব্রুয়ারি কলেজে এসে রিয়াকে বললাম তোমার সাথে কিছু কথা ছিল.
রিয়া: কি কথা বল।
আমি: একটা লাল টুকটুকে গোলাপ ফুল দিয়ে রিয়াকে সবার সামনে প্রপোজ করলাম।
I love you Riya.
রিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল এবং বলতে লাগল এ হয়না না মাসুদ।
আমি: কিন্ত কেনো হয় না?
রিয়া: কারন আমি কালো,আমার চেহারা খারাপ।
আমি: চেহারা খারাপ তো কি হয়েছে তোমার ও তো ভালোবাসার অধিকার আছে?
রিয়া: কিন্তু তোমার পরিবার, তোমার বন্ধু বান্ধব কেউ আমাকে মেনে নিবে না মাসুদ।
( কালো মেয়েদের ভয় একটাই তাকে যদি কেউ না মেনে নেয়,তাকে যদি কিছুদিন পর ভূলে যায়।)
আমি: সেটা তোমার ভাবতে হবে না। আমি সব সামলে নিব। আম্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। তারপর ও আমাকে জরিয়ে ধরল।
রিয়া: আমাকে কোনদিন ভূলে যাবে নাতো?
আমি: কোন দিন ও না।
আমাার আর রিয়ার প্রেম হয়ে গেল।
তারপর থেকে আমার বন্ধুরা আমার সাথো ভালো করে মিশে না কারন আমি রিয়ার সাথে প্রেম করি।একদিন আমার বন্ধু রুবেল বলল: তোর রুচিটা এত খারাপ কেনো তুই রিয়ার মত একটা বিশ্রী মেযের সাথে প্রেম করস? তুই আমাদের সাথে আর মিশবি না।তারপর একাএকা ই থাকি।
দেখতে দেখতে লেখাপড়া শেষ করে একটা কম্পানির চাকুরি করি,,,
তাই ভাবলাম বাবা মাকে রিয়ার কথা জানিয়ে দিব।
কিন্তু বাবা মা কিছুতেই ঐ মেযে আনবে না।
তাই আমি মাকে বললাম: আচ্ছা মা তুমি আর রিয়া দুজন ই মেয়ে.তাহলে ওর সমস্যা কি? তোমার দুটা হাত আছে ওর ও দুটা হাত আছে?তোমার নাক,কান,মুখ আছে তা ওর সাথে ও আছে?
সবচেয়ে বড় কথা হল ওই মেয়েটাও মানুষ। আমরা যদি সবাই সুন্দরি মেয়ে খুজি তাহলে এসব মেয়েদের কে বিয়ে করবে? এরকম একটা মেয়ে যদি তোমার থাকত, তাহলে?
মা চুপ হয়ে গেল।কিন্তু বাবা সমাজের সবাই কি বলবে?
রাখ তোমার সমাজ। সমাজের আট দশটা মানুষের মত সেও একটা মানুষ।
তারপর মা আর কিছু বলল না মা রাজী হয়ে গেল।
ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে হয়ে গেল,,,,
আমরা খুব সুখেই আছি,,,
এখন আমাদেরএকটা দুই বছর একটা মেয়ে আছে,,,
[আসলে কালো বা ফর্সা কোনো বিষয় না।বিষয় হলো সুখে থাকাটা।আপনি যদি একটা কালো মেয়ে বিয়ে করে সুখে থাকেন সেটাই প্রকৃত সুখ।]
এরকম হাজারো রিয়া আছে আমাদের দেশে বন্ধুরা যাদের কষ্টের কোন শেষ নেই
(এখন বলি কেনো আমি কালো মেয়ে বিয়ে করলাম কারন কালো মেয়েরা খুব ভালবাসতে জানে কারন এরা সব সময় হারানোর ভয় পায়।এরা সুধু একটু ভালোবাসার জন্য সব করতে পারে নিজের জীবন আপনার জন্য দিয়ে দিতে পারবে কারন এরা ভালোবাসা খুব কম লোকদের থেকেই পায়।)
লেখাটা লিখতে লিখতে আমার কান্না চলে আসলো,,,,,

লেখক:-অভিশ্রান্ত পথিক।